রাষ্ট্রদ্রোহের মামলায় গ্রেপ্তার বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর জামিন নামঞ্জুর করেছেন আদালত। এবার তার পক্ষে সুপ্রিম কোর্টের ১১ আইনজীবী দাঁড়িয়েছিলেন।
বৃহস্পতিবার (২ জানুয়ারি) সকালে চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. সাইফুল ইসলাম এ আদেশ দেন।
চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালতের সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর মো. রায়হানুল ওয়াজেদ চৌধুরী সিভয়েস২৪’কে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, ‘কোতোয়ালী থানার রাষ্ট্রদ্রোহের মামলায় আসামি চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেছেন আদালত।’
চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি নাজিম উদ্দিন চৌধুরী সিভয়েস২৪’কে বলেন, ‘চিন্ময় দাসের মামলার আজ জামিন শুনানি হয়েছে। আসামিপক্ষে আইনজীবীরা ছিলেন। রাষ্ট্রপক্ষ জামিনের বিরোধিতা করেছে। যেহেতু এটি রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলা তাই হয়তো আদালত জামিন দেননি।’
আদালত সূত্র জানিয়েছে, চিন্ময় দাসের প্রথম আইনজীবী শুভাশিস শর্মা মামলার আসামি হয়ে বর্তমানে আত্মগোপনে আছেন। আর তার পক্ষে সম্প্রতি শুনানি করতে আসা সিনিয়র আইনজীবী রবিন্দ্র ঘোষ চিকিৎসার জন্য অবস্থান করছেন ঢাকায়। আজ চিন্ময়ের পক্ষে ১১ জন আইনজীবী এসেছিলেন সুপ্রিম কোর্ট থেকে। আইনজীবী ঐক্য পরিষদের পক্ষে এই আইনজীবী দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন ‘সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোট’র নেতা অ্যাডভোকেট অপূর্বকুমার ভট্টাচার্য।
সরেজমিনে দেখা যায়, চিন্ময় দাসের জামিন শুনানি ঘিরে সকাল থেকেই নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে ফেলা হয় আদালত চত্বরসহ এর আশপাশের এলাকা। পুলিশের পাশাপাশি র্যাব, এবিপিএন, সেনাবাহিনী এবং বিজিবি সদস্যদের এসময় সতর্ক অবস্থানে থাকতে দেখা গেছে।
শুনানি শেষে চিন্ময়ের পক্ষে আসা আইনজীবীদের উদ্দেশ্য করে ‘ভুয়া ভুয়া’ স্লোগান দেন শতাধিক আইনজীবী। তারা দ্রুত একটি মাইক্রোবাসে করে পুলিশি নিরাপত্তায় আদালত প্রাঙ্গণ ত্যাগ করেন।
এদিকে, ‘উচ্চ আদালতে যাবেন’ জানিয়ে চিন্ময়ের আইনজীবী সাবেক ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অপূর্ব কুমার ভট্টাচার্য বলেন, ‘ওনার (চিন্ময়) বিরুদ্ধে যে সেকশনগুলো দিয়েছে, সেগুলো প্রমাণ করতে রাষ্ট্রপক্ষ ব্যর্থ হয়েছে। যে অভিযোগটি আনা হয়েছে জাতীয় পতাকা অবমাননা, এটি জাতীয় পতাকা ছিল না। তাই আমরা আদালতকে বলেছি, এই মামলা চলতে পারে না। আদালত জামিন না মঞ্জুর করেছেন। আমরা উচ্চ আদালতে যাবো।’
গত ২৫ নভেম্বর ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম ফেরার পথে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এলাকায় রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে করা মামলায় গ্রেপ্তার হন চিন্ময় কৃষ্ণ দাস। পরদিন তার জামিন নামঞ্জুর হওয়াকে কেন্দ্র করে আদালত প্রাঙ্গণে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় আইনজীবী সাইফুল ইসলামকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়।
জামিন নামঞ্জুর হবার পর সেদিনই চিন্ময় দাশের আইনজীবীরা ওই আদেশের বিরুদ্ধে রিভিশন চেয়ে আবার জামিন আবেদন করেছিলেন। তবে সেদিন আর শুনানি হয়নি। গত ৩ ডিসেম্বর চিন্ময়ের জামিন শুনানিতে কোনো আইনজীবী উপস্থিত না হওয়ায় আজ (২ জানুয়ারি) ফের শুনানির দিন ধার্য্য করেন আদালত।
পরবর্তীতে সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী রবীন্দ্র ঘোষ ১১ ও ১২ ডিসেম্বর পরপর দুদিন চিন্ময়ের পক্ষে শুনানি এগিয়ে আনাসহ তিন আবেদন করলেও ওকালতনামা জটিলতায় তা হয়নি।
পাঠকের মতামত